মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি ॥ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় দিন দিন বাড়ছে ইটের ভাটা। এ কারণে কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। পরিবেশ আইন-২০১৩ উপেক্ষা করে বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমিতে অবাধে গড়ে উঠেছে ইট ভাটা।সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে এসব ইট ভাটা আবাদি জমির মাটি সংগ্রহ করছে ভাটা মালিকরা।
জানা গেছে, মঠবাড়িয়া উপজেলায় শতাধিক ইট ভাটা রয়েছে। প্রতিটি ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে আবাদি জমি ও জনবহুল এলাকায়। আবাদি জমির ফসল যাতে ক্ষতি না হয় সেই কারণে ফসলি জমি ও জনবহুল এলাকায় ইট না পোড়ানোর সরকারি নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ম না মেনেই মালিকরা একের পর এক ফসলি জমি ধ্বংস ও গাছ পালাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ফসলি জমি থেকে মাটি উত্তোলন করেই তৈরি করা হচ্ছে ইট, সৃষ্টি হচ্ছে গভীর জলাশয়। ফলে হাজার হাজার বিঘা জমি অনাবাদি হয়ে পড়ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় পোড়ানো হচ্ছে বন ও ফলজ গাছপালা। মাঝে মধ্যে প্রশাসন এসে জরিমানা করলেও থামছে না অনিয়ম।
সরেজমিনে দেখা যায়, মঠবাড়িয়ায় শতাধিক ইটভাটায় (পুইন) জ্বালানি হিসেবে প্রতিদিন পোড়ানো হচ্ছে হাজার হাজার মন কাঠ। আর এসব ভাটা গড়ে উঠছে ফসলি জমিতে। সবগুলো ভাটাতেই কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ফসলি জমির উর্বর মাটি। ক্ষতিকারক এসব ভাটার কারণে জমির ফসল, ফলন এবং ফসলি জমি কমছে। প্রশাসনকে প্রতিবছর মাশোয়ারা দিয়েই চালানো হচ্ছে এ অবৈধ ব্যবসা। দেশ এখন অনেকটাই আমলাতান্ত্রিক হয়ে গেছে বলে মনে করেণ অনেকেই। টাকা দিলেই অনিয়মটা হয়ে যায় নিয়ম আর নিয়মটা হয়ে যায় অনিয়ম।
তবে কেউ কেউ মনে করেন, সরকারের উচিত কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো সম্পূর্ন বন্ধ করা অথবা বৈধতা দেওয়া। ঘুষের বিনিময়ে অবৈধ ইট পোড়ানোকে বৈধতা দেওয়ায় একদিকে যেমন ইটের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরদিকে প্রশাসনের প্রতি সাধারন মানুষের আস্থা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ইট ভাটার পাশের জমিতে ভাল ফলন পাচ্ছে না প্রান্তিক কৃষকরা। মঠবাড়িয়ার কিছু ইট ভাটার মালিক জানায়,আমাদের ইউ এন ও অফিসের লিটনের সাথে যোগাযোগ করেই ইট পোড়াতে হয়। যোগাযোগ না করলে করা হয় জরিমানা অথবা পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া হয় কাঁচা ইট। যোগযোগ মানে কারো কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা, কারো কাছ থেকে ৪০ হাজার আবার কারো কাছ থেকে ৫০-৬০ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে লিটন মিয়া জানান,কাঠ দিয়ে ফসলি জমিতে ইট পোড়ানো সম্পূর্ন অবৈধ। এ অনিয়ম আমরা কখনো সমর্থন করি না। উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা জি এম সরফরাজ জানান, আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাটা (পুইন) থেকে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা সংগ্রহ করেছি। আমরা এ ব্যাপারে এখনও সজাগ আছি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেব। মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত হোসেন রাজা মিয়া জানান, ইট ভাটার মালিকরা শুধু তাদের নিজেদের জমিই ক্ষতি করছে না পার্শ্ববর্তী ফসলি জমিও নষ্ট করছে। এ অনিয়ম বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন।
Leave a Reply